“বাজান, ইসকুলে কইছে সামনের মাসে নতুন জামা সিলায় দিতে। এই খান ছিড়্যা গ্যাছে…” ক্লান্ত সিরাজ ঘরের দাওয়ায় বসে ঝিমুচ্ছিল। আজ বেশ কতদিন হল কোন রুজি নেই। বস্তির এই বিদীর্ণ আশ্রয়টুকুও বুঝি আর টিকিয়ে রাখা যাবে না। তমসার মাঝেও ওর কোটরে বসে যাওয়া চোখের মণিগুলো কেমন জ্বলছে। তাতে খেলে বেড়াচ্ছে চরম হতাশা। ছেলের কথাতে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে নেয় সিরাজ। রাজুর মাথার তেল হাতে লেগে কেমন চিটচিটে হয়ে ওঠে তেলো। সিরাজ বলে
-কাইল থেক্যা তোর আর পড়ন লাগত না, রাজু
– ক্যান? বাজান?
সিরাজ চুপ করে রয়। রাজু আবার বলে, “কইলা না? আমি কি আর ইসকুল যাইতাম না?”
-এই কঠিণ জেবনের দৌড়ে যদি কখনো জিতবার পারি হেই সময় যাবি।
রাজু চুপ করে থাকে। অন্ধকারে কেমন দুর্বোধ্য ছায়া তৈরী করে নেয় দুজনের মাঝে।
পরদিন বিকেলে বেশ এক পশলা বৃষ্টি হল শহরে। স্বচ্ছ জল জমে রাস্তার খানা খন্দে কেমন চকচকে আয়না তৈরী করে নিয়েছে। রোজকার মত রাজু বিভুর সাথে খেলতে নেমেছে পথে। দুজনের হাতেই পরিত্যক্ত টায়ার আর লাঠি। মোড়ের মাথায় এক বেলুনওয়ালা বেলুন বিক্রি করছিল। রাজু আনমনে পকেট হাতড়ে নেয়। শূণ্যতা ছাড়া হাতে আর কিছুই লাগে না। আড় চোখে বিভুকে দেখে নেয় ও। বিভুর হাতে নেতিয়ে পড়া দশটা টাকার নোট। রাজু বলে
-আমারে একটা বেলুন দিবি? বিভুয়্যা?
“দিবাম। তয় আগে আমার লগে এই টায়ার রেইস জিত্যা দেহা। হেরপর।” বিভু নিজের টায়ারের দিকে ইশারা করে। দুই বন্ধু জোর রেইস লাগায়। রাজু প্রাণপনে ছুটছে। ওর মুখে এক অজানা অভিব্যক্তি জেগেছে। দুর্বল লাঠির শাষণে টায়ারও চলছে ল্যাতপ্যাত ভঙ্গিতে। বিভু কিছুটা এগিয়েই রয়েছে। রাজুর খুব কান্না পাচ্ছে। মনেহয় বেলুনটা ও পাবে না আজ। ওর চোখে জমেছে অশ্রু। তাতে জমা একটা কঠিণ প্রশ্ন, “আচ্ছা, জেবনের যেকোন জিনিষের নাগাল পেতে কি সব সময়ই এমন দৌড়ে জিততে হয়?”
(সমাপ্ত)