জাহানারা ইমাম (৩রা মে ১৯২৯-২৬শে জুন ১৯৯৪)
ঘাড় ত্যাড়া সেই রুমীর কথা নিশ্চয়ই সকলের জানা। হ্যাঁ। বলছি ‘একাত্তরের দিনগুলি’ র পাতায় পড়ে নেওয়া সেই শাফী ইমাম রুমীর কথা। যে দেশ মাতৃকাকে স্বাধীন করবার জন্য নির্দ্বিধায় বড় বড় ডিগ্রী লাভের আশাকে জলাঞ্জলি দিয়েছিল অকাতরে। প্রিয় মাতৃভূমির তরে যে হাসতে হাসতে শহীদ হয়েছে অবলীলায়। আর এই মহা সাহসী যোদ্ধাকে সমর যুদ্ধে অবতীর্ণ করবার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন অকুতোভয় মাতা জাহানারা ইমাম। যিনি অসম সাহসে ভর করে প্রমাণ করেছিলেন পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পলায়ন করে নিজেকে গড়ে তুলবার মাঝে গর্বের কিছু নেই বরং বীরত্বের সাথে অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের মাঠে লড়ে যাওয়াতেই বীরত্ব। আসলেই, মুক্তিযুদ্ধ চোখে না দেখে ঐ দু মলাট বন্দী পৃষ্ঠার মাঝে ডুব দিয়ে যে শিহরণ আমরা অনুভব করি তার বুঝি কোন তুলনা নেই। অজানা এক গা শিরশিরে অনুভূতির সঙ্গে এই আত্মত্যাগ, আত্মাহুতির আলেখ্য পড়বার সাথে সাথে আমাদের আঁখি যুগল অশ্রু সজল হয়ে ওঠে অজান্তেই। রুমীর লড়াকু মনোভাব, বীরের মত লড়ে যাওয়া সব কিছুতেই এই মায়াবতী মা তাঁকে প্রচ্ছন্ন ভাবে সাহস যুগিয়ে গিয়েছেন। বেশ কতগুলো সফল গেরিলা অপারেশানের পর পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বন্দী হন রুমী এবং পরবর্তীতে নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। নির্ভীক এই শহীদ যোদ্ধার মা হিসেবে পরবর্তীতে জাহানারা ইমাম কে শহীদ জননী খেতাবে ভূষিত করা হয়।
শহীদ জননী জাহানারা ইমাম একজন শিক্ষিকা কারবার সঙ্গে সফল লেখিকাও ছিলেন। তাঁর রচিত গ্রন্থ গুলির মাঝে গজ কচ্ছপ, (১৯৬৭), সাতটি তারার ঝিকিমিকি, (১৯৭৩)একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি (১৯৮৯) বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও তিনি অনেক গ্রন্থ অনুবাদ করেছেন। যার মাঝে জাগ্রত ধরিত্রী (১৯৬৮) তেপান্তরের ছোট্ট শহর (১৯৭১) উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বারশ্রেষ্ঠ (১৯৮৫) এবং একাত্তরের দিনগুলি (১৯৮৬), অন্যজীবন, (১৯৮৮) জীবন মৃত্যু, (১৯৮৫), বুকের ভেতর আগুন(১৯৯০), দুই মেরু প্রবাসের দিনগুলি, (১৯৯২) প্রভৃতি তাঁর অবিস্মরণীয় সৃষ্টি হিসেবে বিবেচিত হয়।
জাহানারা ইমাম বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, স্বাধীনতা পদক, রোকেয়া পদক, কমর মুশতরী সাহিত্য পুরস্কার, মাষ্টার দা সূর্যসেন পদক সহ বহু সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
রত্নগর্ভা এই রমনী রাজনীতির মাঠেও সমান ভাবে সফল এবং সক্রিয় ছিলেন। তিনি সর্বদা একাত্তরের চেতনাকে সযত্নে নিজের মাঝে লালন করেছেন। গণ আদালতের রায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
মহান এই ব্যক্তিত্ব ১৯২৯ সালের ৩রা মে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে এক রক্ষণশীল বাঙালি মুসলিম পরিবারে ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট সৈয়দ আব্দুল আলী এবং সৈয়দা হামিদা বেগমের কোল আলো করে জন্ম গ্রহন করেন। আজ সেই ৩রা মে, আজকের এই দিনে এই মহীয়সী নারীর প্রতি জানাই অপার শ্রদ্ধা ও ফুলেল শুভেচ্ছা।