কি ব্যাপার? ওকে কোলে নিয়েছ কেন? ও খুব বিরক্ত হয় কেউ কোলে নিলে। ওকে কোল থেকে নামাও।
সুমনা রেগে ওঠে তার দেবর সৌমেনের ওপর। একটু হকচকিয়ে যায় সৌমেন। বছর ছয়েকের আদরের ভাতিজিটাকে কোলে নিয়ে চকলেট দিচ্ছিল ও। “কিন্ডার জয়” চকলেট বড় পছন্দ করে ওর এই পিচ্চি ভাতিজি নুহা। ভীষণ আদুরে, চটপটে বাচ্চা! কি সুন্দর টরটর করে কথা বলে! মনে হয় শুধু শুনি আর শুনি। এই বয়সেই সে নজরুল ইসলামের “লিচু চোর” কি সুন্দর করে আবৃতি করতে পারে। বাসায় গেলেই সৌমেনের কোলে দৌড়ে এসে উঠবে বলবে
: চাচ্চু জান? আমি না আরেকটি রাইমস শিখেছি “ হেই ডিডেল ডিডেল” তুমি শুনবে?
: বল মামনি!
: হেই ডিডেল.. ডিডেল..
দ্য.. কক…ডাউন..
সুন্দর কোঁকড়া চুলগুলো ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে, ছোট দুষ্টুমি ভরা চোখ দুটো নাচিয়ে ছড়া বলতে থাকে নুহা। ভারী মজা লাগে সৌমেনের। ভাইয়ের বাসায় বেড়াতে আসার সময় রাজ্যের সবকিছু তার নিয়ে আসতে ইচ্ছে করে ছোট্ট মিষ্টি নুহার জন্য। কখনও রঙ পেন্সিল, কখনও কালার বুক, কখনও সফট টয়, কখনও চকলেট বক্স এসব সৌমেনের হাতে থাকবেই থাকবে। নুহাও সৌমেনের ভীষণ ভক্ত, সেটা সবাই জানে। আচমকা আজ সুমনা ভাবীর এমন কথাতে এবং কথা বলার ভঙ্গিতে দুটোতেই ভীষণ ভাবে অবাক হয় সৌমেন। অবাক বললে কম বলা হবে বলা যায় ভীষণভাবে ধাক্কা খায় ও।
: কি ব্যাপার, ভাবী কি হয়েছে?
সৌমেনের কথার কোন উত্তর করে না সুমনা। রান্নাঘর থেকে তড়িঘড়ি করে বের হয়ে আসাতে ওর ডান হাতে তখনও খুন্তি ধরা। চুলার ওপরে রাখা কড়াইয়ের তেল ঠাস ঠাস আওয়াজে ফুটছে। সুমনা মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে
: নুহা। যাও। হোম ওয়র্ক করতে যাও।
: কিন্তু মা। আমি তো চাচুর সাথে রাইমস বলছি। তুমি কেন মিথ্যে বলছ? আমি তো চাচুর কোলে বসে সবসময় চাচুকে রাইমস শুনাই। কেন লাই করছ মা?
থতমত খায় সুমনা। ধমকে উঠে বলে
: বেশী পেকেছ, তাই না? যাও, পড়তে যাও।
নুহা সৌমেনের কোল থেকে নেমে ভেতরের ঘরে চলে যায়। সৌমেন ভীষণ বিব্রতবোধ করতে থাকে। টিভিতে সময় সংবাদ শুরু হচ্ছে। সংবাদ পাঠিকা শুরুতেই ব্রেকিং নিউজ দিচ্ছেন
“আজ সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়িতে দু বছরের এক শিশুকন্যাকে ধর্ষণ করে হত্যা করার পর ছাদ থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে।নির্মম এই ঘটনার শিকার নিহতের মা এই ব্যাপারে বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ি থানাতে……”
সৌমেন আর সুমনা খবর শিরোনাম শুনছিল। হঠাৎ সৌমেনের মাথায় বিদ্যুৎ স্ফুলিঙ্গ খেলে যায়। আচমকা কেউ যেন সজোরে চপেটাঘাত করল ওকে। সৌমেন বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে সুমনার দিকে তাকায়। চোখ নামিয়ে নেয় সুমনা। তবে কি সুমনা সৌমেন কে..?
আর ভাবতে পারে না সৌমেন। কানগুলো লজ্জায়, অপমানে গরম হয়ে ওঠে ওর। কিছুক্ষণ হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে ঝড়ের বেগে বাসা থেকে বেড়িয়ে যায় ও।
সুমনা টিভির অফ বাটন প্রেস করে। টিভি কেন যেন এখন আর দেখতে একদম ভালো লাগে না। সৌমেন চলে যাওয়ার পর থেকে সদর দরজাটা খোলা রয়েছে। দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে সুমনা চুলার কাছে এসে দাড়ায়। কড়াইয়ের তেল পুড়তে শুরু করেছে। চুলার নব ঘুরিয়ে বন্ধ করে দিয়ে তেল বাঁচানোর চেষ্টা করে ও। কিন্তু মনের মাঝে যে দুশ্চিন্তার আগুন তুষের মত জ্বলছে তা থেকে কিভাবে রক্ষা পাবে? মাথাটা কেমন করে ওঠে সুমনার। আজকাল কাউকে বিশ্বাস হয় না ওর। কাউকে না। সৌমেন মনে হয় মাইন্ড করেছে। করারই কথা। পরক্ষণে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে সৌমেনের কথা। করুক গিয়ে মাইন্ড। তাতে কি? নুহার নিরাপত্তার জন্য খালি সৌমেন কেন পুরো পৃথিবীর সবার অভিমান, অভিযোগ সয়ে যাবে। তবুও নুহার গায়ে কোন আঁচড় লাগতে দিবে না ও।কোনদিনও না।
সুমনার চোখের নীচে দুবছর বয়সী বাচ্চাটার মায়ের ক্রন্দনরত মুখ টা ভেসে ওঠে আর কানে বাজতে থাকে তার বুকফাটা আর্তনাদ…..
“ আমার বাচ্চাটা…মনা…আমার দুধের বাচ্চাটা… জানোয়ারটা ওরেও ছাড়ল না…”
: মা, আমাকে চকলেট মিল্ক বানিয়ে দিবে? ক্ষিদে লেগেছে।
ছোট্ট নুহাওর তুলতুলে পায়ে কিচেনের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। হাত দিয়ে চোখ কচলাচ্ছে ও। কোঁকড়া চুলগুলো এলোমেলো হয়ে সারা মাথা ছড়িয়ে পড়েছে। এত মায়া ওর চেহারায়। একটু আগে মায়ের কাছে খাওয়া বকাটাও ভুলে গিয়েছে। আদুরে আব্দার নিয়ে হাজির হয়েছে মায়ের সামনে। সুমনা মেয়েকে কোলে তুলে নেয়। গালে একে দেয় মমতার আদর স্পর্শ। মেয়েকে বুকের মাঝে শক্ত করে আটকে ধরে বলে
: আমি সব সময় তোকে আমার কাছে কাছে রাখব। এক মুহুর্ত চোখের আড়াল করব না তোকে।একদমও না বুঝলি?
নুহা মায়ের কথার মর্ম বুঝতে পারে না। অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। সুমনা মেয়েকে কোলে নিয়ে রাখে। মনের মাঝে ওর রাজ্যের শংকা ডানা ঝাপটাতে থাকে।
জানালার ধারে থাকা টিকটিকির ডাক শোনা যায়
টিক…টিক…টিক…।
রাতে সুমনা ওর মেয়েকে বুকে নিয়ে শুয়েছে। মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে রূপকথার নানা রকম কল্পকাহিনী শুনাচ্ছে ও। ছোট্ট নুহার প্রশ্নের ঝুলি থেকে রাজ্যের সব প্রশ্ন একটার পর একটা প্রশ্ন মুক্তোদানার মত পটপট করে ঝরে পড়ছে।
: আচ্ছা মা? রাজা সুয়োরাণীকে কেন কষ্ট দিল?
ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমী দেখতে কেমন? রাজার হাতি কয়টা ছিল? রাজকন্যা কি অনেক সুন্দর?
মেয়ের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিল সুমনা। কিন্তু কেন যেন আজ নিজের মধ্যে নিজেকে রাখতে পারছে না ও। ভয়টা কেমন অক্টোপাসের মত চারপাশ থেকে ওকে পেঁচিয়ে ফেলেছে। নুহার স্কুলের এক গার্ডিয়ান আজ বলছিল
: ভাবী, বাচ্চাদের এসব ব্যাপারে ছোট বেলা থেকেই বুঝানো উচিত।
আকাশ থেকে পড়ে সুমনা কথাটা শুনে
: ভাবী ছয় বছরের একটা বাচ্চা ওকে এসব ব্যাপার কি করে বুঝাব? কি বুঝবে ও?
: জানি না ভাবী, কি করে কি হবে? তবে কিছু তো করতে হবে একটা।
উদ্বিগ্ন মুখে স্কুল চত্বর ছাড়ে সব মায়েরা। সবার চোখে মুখে দুশ্চিন্তা।
সুমনা নিজের ছোটবেলায় ঝাঁপ দেয়। কত আনন্দময় ওর ছেলেবেলা। দৌড়, লাফ, হাসি আরও কত কি! শরীরে যখন কিশোরীর ছাপ স্পষ্ট হতে লাগল তখন মা খালি কামিজ পায়জামা ওড়না দিতেন পড়তে, সুমনার ওসব গ্যান্জাম মোটেও ভালো লাগত না। ফ্রকেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ হত ওর। মা কত বকাঝকা করত তখন। একবার বাবার সাথে বৈশাখী মেলাত গিয়েছিল ও। কি ভীড়! বাবা ওকে অনেক আগলে একটা মাটির পটারি দোকানে নিয়ে আসে। ভীড় এতটা ছিল না সেখানে। ওর পছন্দ করা মাটির জিনিষগুলির দাম দিচ্ছিলেন বাবা। হঠাৎ তখন বাবার বয়সী এক লোক ইচ্ছে করেই সুমনার শরীর স্পর্শ করে। ভালো খারাপের মাঝে পার্থক্য আঁকার সামর্থ তখন সুমনার হয়েছে। লোকটার সেই আচরণ আর এরপর কদাকার মুখের হাসির অর্থ বেশ ভালই বুঝতে পেরেছিল সুমনা। ভয়ে, লজ্জায়, ঘেন্নায় সিঁটিয়ে গিয়েছিল ও। বাড়ি এসে মা কে ধরে খুব কেঁদেছিল সুমনা। মা সুমনাকে ধরে অশ্রুসজল নয়নে বলেছিল
: মেয়ে হয়ে জন্ম নেয়া বড় জ্বালা রে মা! বড় জ্বালা।
এরপর কেন যেন নিজেই আর ফ্রক পড়তে চাইত না সুমনা। কামিজ পায়জামাতেই নিজেকে বেশ ভাল অনুভুত হতে লাগল।
সুমনা যেদিন মা হলো, চাঁদের মত ফুটফুটে নুহাকে দেখে সবার সে কি উচ্ছ্বাস। বাঁধনহারা খুশিতে যেন ভেসে গিয়েছিল সবাই। কেবল সুমনার মায়ের মুখে কোন হাসি ছিল না। শুকনো হাসি হেসে বলেছিলেন
: মেয়ে হলো তোর?
খুব রাগ হয়েছিল সুমনার। মা কে বেশ কড়া করে বলেছিল
: কেন ছেলে হলে বেশী খুশি হতে? আমার জন্মের পরও কি অখুশি ছিলে?
মৃদু হাসি দিয়ে মা বলেছিল
: ভুল বুঝিস না মা। এই মেয়েটার সামনে যে কঠিণ দুনিয়া রে….
সুমনার দুগাল বেয়ে অশ্রু বেয়ে যাচ্ছে। আজ মা কে খুব মনে পড়ছে। মা কে যে আজ বড় প্রয়োজন ছিল ওর। মায়ের সেদিনের তিতে কথার মর্মার্থ আজ সে বুঝতে পেরেছে। কিন্তু মা যে নেই। কি করে একা পারবে ও?
সুমনার কান্না দেখে নুহা অবাক হয়।
: মামনি কাঁদছ কেন?
সুমনা মেয়েকে কাছে টেনে নেয় বলে
: মা শোন, তোমাকে তোমার আম্মু আব্বু ছাড়া কেউ যদি কোলে নেয়, আদর করতে চায় তো তুমি কখনও কারও কোলে যাবে না, আদরও নিবে না। কেউ বাসায় এলে বা আমরা কোথাও গেলে তুমি সবসময় মা র সাথে সাথে থাকবে। ঠিক। আছে? আর কেউ যদি কখনও ব্যাড টাচ করে….
: ব্যাড টাচ কি মামনি?
সুমনা থতমত খায়। এই ফুলের মত শিশুটিকে ব্যাড টাচের মানে কি বুঝাবে ও ভেবে পায় না। বলে
: ব্যাড টাচ মানে মা আরেকদিন বুঝিয়ে বলব। কিন্তু তুমি আব্বু আম্মু ছাড়া কারও কাছে কখনও যাবে না। সে যেই হোক। বুঝলে?
নুহা মাথা নেড়ে জানায় সে বুঝতে পেরেছে। টিং করে মোবাইলে নোটিফিকেশন্স এলো
“ দু বছরের শিশুকন্যাকে ধর্ষণের পর হত্যা করার দায় স্বীকার করল নেশাগ্রস্থ পিতা”।
সুমনা স্তম্ভিত! কি ভাববে ও বুঝতে পারছিল না। আচমকা গা গুলিয়ে ওঠে ওর। দৌড়ে বাথরুমে গিয়ে হড়হড় করে বমি করে দেয়।
কয়েকদিন পরের কথা। নুহা তাদের টিভির সামনে বসে টম এন্ড জেরী দেখছে। এক পর্যায়ে নুহার নানা হাসনাত সাহেব রুমে আসলেন। হাসনাত সাহেব টাঙ্গাইল থাকেন। ঢাকায় কতদিনের জন্য এসেছেন ট্রিটমেন্টের জন্য। মেয়ের বাসাতেই এসে উঠেছেন। নুহা কার্টুন দেখে হাসছিল। টিভির পর্দায় জেরী টম কে শায়েস্তা করে যাচ্ছে। এমন সময় হাসনাত সাহেব নাতনীকে আদর করে কোলে তুলে নিতে চাইতেই নুহা বলে উঠল
: না। নানাভাই আমি তোমার কোলে উঠব না। মা বলেছে বাবা আর মা ছাড়া কারও কোলে না উঠতে।
: তাই? কিন্তু আমি তো তোমার নানাভাই।আমার কোলে উঠলে কিছু বলবে না।
: না। মা বকা দিবে।
এই সময়ে সুমনা চলে আসলে হাসনাত সাহেব অদ্ভুত দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকায়।সুমনার লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করে। তবুও বলে
: আমাকে মাফ কর বাবা।
হাসনাত সাহেব কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে উঠে দাঁড়ায়। ধীর পদক্ষেপে এসে মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলেন
: না মা। আমি তোর কারণে কোন কষ্ট পাই নি। আমি কষ্ট পাচ্ছি এই ভেবে যে এই পচন ধরা নষ্ট সমাজে ভালভাবে সম্ভ্রম নিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম জন্য ঐ ছয় বছরের ছোট্ট শিশুকে এখন থেকেই করতে হচ্ছে।এটা যে কত বড় লজ্জা! আমরা নষ্ট হয়ে গেছি মা। নষ্ট সমাজে হায়না, শকুন চারদিকে ওঁত পেতে রয়েছে শিকারের আশায়। আজ যে অবিশ্বাস তোর মনের মাঝে বাসা বেঁধেছে। সন্দেহের যে ঘুন পোকা খালি তোর না তোর মত আরও অগণিত মায়ের মনের মাঝে পরস্পরের সম্পর্কের প্রতি বিশ্বাসটাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। সেজন্য তো এই আমরাই দায়ী।এই লজ্জা তোর না মা, এই লজ্জা আমাদের।পারলে তোরাই আমাদের ক্ষমা করিস, মা।
হাসনাত সাহেব বেরিয়ে গেলে, সুমনা কান্নায় ভেঙে পড়ে। কেন সে কারও প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না? কেন কারও প্রতি বিশ্বাস সে রাখতে পারছে না? কেন বাচ্চাকে সম্পর্কের ওপর আস্থা রাখার শিক্ষা দেবার পরিবর্তে সম্পর্কের মাঝে আস্থাহীনতা কে শিক্ষা দিতে হচ্ছে?দম বন্ধ হয়ে আসে ওর। পৃথিবীটা এমন পিশাচ দিয়ে ভরে যাচ্ছে কেন? মানুষ এমন কেন হয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে? নারী দেহ মানেই কি শুধু ভোগ করা? নারীর পরিচয়,অস্তিত্ব কি কেবল শরীরেই? তার মন, হৃদয়, আত্মার কি কোনই মূল্য নেই ? শুধুমাত্র “নারী”শব্দটি কি একটা পুরুষের মাঝে কামভাব জাগিয়ে তোলার জন্য যথেষ্ঠ? হোক সে তনু অবয়ব দু বছরের শিশুর কি বিশ বছরেরনারী মানেই কি শুধুমাত্র ভোগ করে আনন্দ নেওয়া? হোক না সে নিজের মেয়ে, বোন, এতে কিছুই যায় আসে না কারও।
সুমনা কেঁদেই চলেছে অঝোরে। ওর অস্থির মন খুব চাইছে সবাইকে বিশ্বাস করতে, তার আপন সবার ওপর নির্ভর করতে, কিন্তু সে তা কোনভাবেই করতে সক্ষম হচ্ছে না।নুহা এসে মায়ের কাছে দাঁড়িয়েছে। মায়ের চোখের পানি সে তার ছোট ছোট হাত দিয়ে মুছে নিচ্ছে। সুমনা মেয়েকে বুকে ধরে নিয়ে কাঁদতে থাকে বলে
: মা তুই কেন মেয়ে হয়ে জন্মালি মা?
আশ্চর্য! যে কথাটা একদিন নিজের মায়ের মুখে শুনে সে রেগে গিয়েছিল, সেই একই কথা আজ তার নিজের মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে। মায়ের কথার মর্মার্থ সে আজ বুঝতে পারছে। মায়ের ছয় বছর আগে বলা কথাটা যেন প্রতিধ্বনিত হয় ওর কানে
“ভুল বুঝিস না মা, এই মেয়েটার সামনে কঠিণ দুনিয়া রে..”
ছোট নুহা মায়ের কোলে চুপ করে বসে রয়েছে। তার ছোট মস্তিষ্ক বুঝতে পারছে মা তাকে কিছু একটা বুঝাতে চাচ্ছে, মা খুব চেষ্টা করছে ওঁকে বুঝাতে কিন্তু পারছে না। এজন্যই কি মা এত কাঁদছে? কিন্তু বড় হলে ও ঠিক মায়ের কথা বুঝে নিবে। তবে বড় হতে তো দেরী আছে! এত দিন মা কাঁদবে? না। ও এখনি মায়ের কথা বুঝে নিবে। ওর ছোট মনে মায়ের বলা কতগুলো শব্দ ঘুরে বেড়ায়
কোল, আদর, ব্যাড টাচ, মেয়ে…..
নুহার ছোট মায়াভরা চোখদুটিতেও জল খেলা করছে। আচ্ছা এগুলো কি পাজল ওয়ার্ড! নুহা খুব চেষ্টা করছে পাজল ওয়ার্ডগুলো মেলাতে কিন্তু ও পারছে না।পাজল ওয়ার্ড গুলি যে বড্ড কঠিণ ওর জন্য।