উল্টো দর্পন

by soniatasnim
অপারেশান শেষ হবার পর ঘড়ির কাঁটা পেড়িয়ে গেল আট চল্লিশ ঘন্টা। বাবার জ্ঞান ফিরবে যে কোন সময়ই। প্রতি মুহুর্ত কেবল তাঁর চোখে মেলে তাকাবার প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছি। আচম্বিত ঘটে যাওয়া গোটা ঘটনাটা কেমন গোলমেলে লাগছে এখনও। সেইদিন রোজকার মতই বাবা সাইকেলে চেপে বাসায় আসছিলেন। পথে একটা ছোট্ট ভুল মুহুর্তেই সব কিছু ওলট পালট করে দিল। এরপরের সমীকরণটা বড্ড জটিল। এই দুটো দিনের মাঝে এই হাসপাতাল আর এর মাঝে আটকে থাকা ফিনাইলের গন্ধটা যেন কত আপন হয়ে গিয়েছে আমার। ছুরি কাঁচির নীচ থেকে বাবা ফেরত আসবার পর থেকেই কেবল ওনার ঘুমন্ত মুখের দিকে চাতক পাখির ন্যায় চেয়ে রয়েছি। ডাক্তার বাবুর হিসেব মত বাবার বলিষ্ঠ পা দুটোকে চিরতরে খরচের খাতাতে ফেলে দিতেই হল। অনেক যোগ বিয়োগ করেও হিসেবটা মেলানো গেল না কোনমতেই।
– স্যার, পেশেন্টের সেন্স এসেছে।
শ্বেত পোশাক পরিহিত এক নার্সের ডাকে চমকে উঠি। বাবার জ্ঞান এসেছে! খুশির ঢেউ এ চাপতে গিয়েই বেসামাল তরঙ্গের ধাক্কায় যেন ছিটকে পড়ি। অজানা এক নীল আতংক কেমন ছড়িয়ে পড়ে মনে।
– স্যার…
নার্সের তাড়নায় এবার সম্বিত ফিরল। বলি
– হ্যাঁ। চলুন…
ভারী দরজাটা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করতেই বাবার হাসি মাখানো মুখটা দেখতে পাই। কিন্তু ঔজ্জ্বল্যের আড়ালে বুঝি এক বিবর্ণতা লুকিয়ে রয়েছে।
– কেমন আছ বাবা?
আমার বোকা প্রশ্নে বাবা ফ্যাকাশে হাসি হাসে আবার। হাত দুটো দিয়ে বেডের মাঝে হাত বুলাতে থাকেন। জায়গাটা কেমন ফাঁকা। আমি চোখ নামিয়ে নেই। বাবা চাদর হাতে গুটিয়ে নিচ্ছেন আর ক্রমশ সেটা ওপরে উঠে আসছে। আমি সহ্য করতে পারি না। বাবার হাত নিজের হাতে মুঠিতে চেপে নিয়ে ধরা গলাতে কেবল বলি
– বাবা…
বাবা থমকে যান। আমার হাত জড়িয়ে ধরেন শক্ত করে। রুমের এক কোণে রেখে দেওয়া হুইল চেয়ারটার দিকে তাকিয়ে বলেন
– ঘাবড়াস না খোকা। আমি এতটুকুও ভেঙে পড়িনি। তবে তোর হাত পাকড়ে চলার দিন যে এত জলদি চলে আসবে, তা সত্যি কোন দিন ভাবি নি।
ছবি: সংগৃহীত

Related Posts

Leave a Comment