গল্পগ্রন্থ_মায়ের গয়নার বাক্স

by soniatasnim
ফেসবুক (প্রকাশিত)
গল্পগ্রন্থ_মায়ের গয়নার বাক্স
প্রকাশনী_শব্দভূমি
প্রকাশকাল_অমর একুশে বইমেলা ২০২০
————————————————-
– মা, তোমার শরীর নাকি খারাপ?
মেঘের মুখে কথাটা শুনে নিলুর কেন যেন খুব ভালো লাগল। ছেলে তাহলে খেয়াল করেছে যে কতদিন যাবত তার মায়ের শরীরটা ভালো নেই। নিলু অবশ্য কাউকে কিছু বলেও নি। গত দুদিন ধরে মায়ার মা যা একটু তেল গরম করে পায়ে মালিশ করেছে এটুকুই।
– হ্যাঁ রে, পায়ের ব্যাথাটা বেড়েছে এছাড়াও বুকের ব্যাথাটাও করছে বেশ কতদিন ধরে। তুই কিভাবে জানলি বাবা?
– বা রে! এই যে তুমি এফ. বি তে স্ট্যাটাস দিয়েছ শরীর ভালো নেই। তাতে লভ, স্যাড রিঅ্যাক্ট পড়েছে মাত্র এক চল্লিশটি। কি ব্যাপার মা, তোমার সাইবার ফ্রেন্ড এত কম! সিরিয়াসলি?
মেঘ টোস্টের কোণাতে কামড় দিতে দিতে বলে।
– আমার বন্ধু র সংখ্যা খুব একটা বেশি না রে বাবা। তোরা যদি একটু আমাকে সময় দিতি তাহলে এই একচল্লিশ সাইবার ফ্রেন্ডেরও আমার দরকার হতো না।
বলতে বলতে গলা ধরে আসে নিলুর। কান্না যেন বাষ্প হয়ে ওঠে।
– নট এ্যাগেইন মা। প্লিজ! গিভ আস সম স্পেস। ও. কে?
আমরা এখন আর সেই ছোট নেই, কবে তুমি বুঝবে বল তো?
মেঘ বিরক্ত হয়ে বলে। সামনে রাখা টোস্টের ওপর দুটি মাছি ভনভনিয়ে যাচ্ছে।
- মা তুমি কিন্তু বেশ কথায় কথায় সেন্টিমেন্টাল হচ্ছ ইদানিং। কি হয়েছে তোমার বলত?
দাঁত ব্রাশ করতে করতে বৃষ্টি এসে দাঁড়ায়। গায়ে এখনো রাত পোশাক। ছোট করে নি:শ্বাস নেয় নিলু।
- সরি । আসলে তোদের পার্সোনাল ব্যাপারে কথা বলা উচিত হয় নি আমার।
– এই দেখ, তুমি ব্যাপারটা খুব সিরিয়াসলি নিয়েছ।
– আমার সিরিয়াসলি নেওয়া না নেওয়া তোদের কাছে কি আদৌ কোন ম্যাটার করে, মেঘ?
– ধ্যাত!
মেঘ নাস্তা ফেলে চলে যায়। দাঁত ব্রাশ করতে করতে বৃষ্টিও তার রাস্তা মাপে। টেবিলে নিলু একা পড়ে রয়। সামনে রাখা চায়ের কাপে চা ঠান্ডা হয়ে আসছে। কেন যেন চা ও খেতে ইচ্ছে হয় না নিলুর। মোবাইলে টিং করে নোটিফিকেশান আসে। চেক করতে দেখা গেল অতুনু কে, হোটেল সানশাইনে চেক ইন করেছে। ফিলিং এক্সাইটেড উইথ বিজনেস পার্টনার জোবায়ের আহমেদ। কিছু ছবিও পোস্ট করেছে অতুনু। হোটেল রুম, খাবার দাবার, ব্যবসায়িক বন্ধুর সাথে দাড়িয়ে। ভালই দেখাচ্ছে অতুনুকে। শারিরীক কসরত করার কারণে এই বয়সেও ভীষণ ফিট। কমেন্ট বক্সে কিছু লিখতে গিয়েও লিখল না নিলু। কি দরকার? জীবনটা কেমন এখন ফেইস বুকের পাতায় পড়ে নিতে হয়। একই বাড়িতে থেকেও মায়ের অসুস্থতার খবর ছেলেমেয়েরা ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে পায়। বিজ্ঞান কি আসলেই মানুষের মাঝে দুরত্ব কমিয়ে এনেছে? এসব ভাবতে ভাবতে মোবাইলটা রেখে মায়ার মা কে ডেকে চা টা গরম করে দিতে বলে নিলু।
—————
মায়ার মা এর সাথেই যা একটু টিকিটাক কথা হয় নিলুর। তা না হলে তো চার দেওয়ালের আভিজাত্যের এই খাচাতে দম বন্ধ হয়ে বুঝি বা ও কবে মারা যেত।
মেঘ, বৃষ্টি ধরতে গেলে এই মায়ার মায়ের হাতেই মানুষ। বৃষ্টির জন্মের পর মায়ার মা এসেছিল এই বাসায়। এরপর দিন গেছে সময়ের সাথে সাথে পরিবারের বৃদ্ধিটাও হয়েছে একটু একটু করে। অতুনু বরাবরই ব্যস্ত থেকেছে ব্যবসা নিয়ে। সংসারে কনট্রিবিউশান বলতে সময় মত টাকা পয়সা দেওয়া এতটুকুই বুঝে ও। এর বাইরে কিছু বলতে গেলেই ক্ষেপে উঠত বলত
– ম্যানেজ করে নাও না নিলু। দেখছ তো আমার ব্যস্ততা। আর এত কমপ্লেইন কেন, তোমার আমার কাজের ব্যাপারে? তোমাদের জন্য তো করা তাই না? একটু বুঝার চেষ্টা কর।
– মেঘ, বৃষ্টি বড় হচ্ছে অতুনু। বাবা হিসেবে তোমার ওদের ও কিছু সময় দেওয়া উচিৎ। শুধু মানি কন্ট্রিবিউশান করলেই সংসারের সব দায়িত্ব পালন করা হয় না অতুনু। দে নিড ইওর কম্প্যানিওন। ট্রাই টু আন্ডার স্ট্যান্ড প্লিজ।
– তোমার সাথে কথা বলাই বেকার।
অতুনু রেগে ওঠে
– আচ্ছা! বাচ্চাদের কথা ছাড়। আমি? আমাকে? আমাকে কতটুকু সময় দাও তুমি? ওয়াইফ হিসেবে আমারও তো তোমাকে প্রয়োজন তাই না? নাকি খালি তোমার বিশেষ কিছু প্রয়োজন মেটানোর সময়ই খালি আমাকে দরকার পরে? শেষ কবে আমরা একসাথে রাতের খাবারটা খেয়েছি বলতে পার?
- ইউ!
থেমে যায় অতুনু অগ্নি দৃষ্টিতে একবার শুধু নিলার দিকে তাকায় এরপর গটগট করে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। নীলা তাকিয়ে থাকে শুধু অতুনুর যাওয়ার পথে। মেঘ আর বৃষ্টিকে নিয়েই নিলুর দিন কেটে যেত। ওদের পড়ালেখা, খাওয়াদাওয়া, সংসারের টুকিটাকি এসব কিছুর ঝক্কি একা নিলু বয়ে বেরিয়েছে সারাজীবন। নিজে এম. এ পাশ হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র বাচ্চাগুলোর দিকে তাকিয়ে কখনও কিছুতে জড়ানো হয় নি। মেঘ প্রায় অভিযোগ করত
- মা বাবা কখনও স্কুলের পি. টি. এম এ কেন যায় না? আমার বন্ধুদের সব বাবারা আসে। শুধু আমার বাবা যায় না
– বাবার যে কাজ থাকে বাবু! কাজ শেষ হলেই যাবে, মা তো যাই তাই না?
– বাবার তো সব সময়তেই কেবল কাজ। মেঘ আপন মনে বলে আর খেলতে থাকে।
দীর্ঘনি:শ্বাস একটা বেরিয়ে আসে বুক চিঁড়ে। সারাদিন ঘর সংসার আর রাতে অদ্ভুত নীরবতা। অতুনুর ফোনটা সন্ধ্যার দিকে প্রায় আসে আর ফোনে ওর কথাগুলো এখন তোতা পাখির শেখানো বুলির মত কানে বাজে
– হ্যাঁ নীলু, তুমি খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে পড়। আমি ডিনারটা বাইরে সেরে ফেলব ফিরতে রাত হবে। পার্টির সাথে জরুরী মিটিং আছে পরে কথা হবে। রাখছি।
নিলুর কোন কিছু বলার প্রয়োজন হতো না কখনও ঐ প্রান্ত থেকে ফোন অলরেডি ডিসকানেক্ট হয়ে যেত। একাকীত্ব কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল ওকে। অগত্যা নিশিসঙ্গী হলো রাজ্যের ঘুমের অষুধ। এই ভালো, কোন রকম চিন্তা ভাবনা ছাড়া কি শান্তির ঘুম! চাইলেও চোখ মেলে রাখা যায় না। এভাবেই রুটিনে অভ্যস্ত হয়ে গেল নিলু। পুরানো বান্ধবী কিছু সাথে যোগাযোগ ছিল। ওদের সাথে আজ নিউমার্কেটে ফুচকা খাওয়া, কাল মলে শপিং করা! ভালই লাগে শপিং করতে কত যে জামা কাপড় আর শাড়ি। কাবার্ড খুললে নিলুর ভ্যাবাচ্যাকা লেগে যায়। অতুনু আর যাই হোক কখনও তো আর ওকে আর্থিক অস্বচ্ছলতা বুঝতে দেয় নি। ওর এক কথা, যা খুশি কর। ব্যাস! আমার কাজ নিয়ে কথা বলতে এস না। বিয়ের পর থেকে কখনও হিসাব নিকাশ পর্যন্ত জানতে চায় নি অতুনু নিলুর কাছ থেকে। এসবের মধ্যে এক সময় মেঘ স্কুলের গন্ডি পার করল। বৃষ্টি তখন এইটে। ছেলের ভর্তি মেয়ের জে. এস. সি, সব যেন মাথার ওপর দিয়ে গেল। একজনকে এই কোচিং, আরেকজনকে সেই কোচিং, ফুরসত নেই শ্বাস ফেলারও।
সময়ের আবর্তে ছেলেমেয়ে দুটো এখন মোটামুটি একটা প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে। মেঘ ব্যবসায় প্রশাষনের স্নাতক তৃতীয় বর্ষে আর বৃষ্টি বাংলা স্নাতক প্রথম বর্ষে। আগে তাও ছেলেমেয়েদের পেছনে দৌড়াতে হতো কিন্তু এখন ওদেরই নিজস্ব জগত হয়েছে। ক্লাস, বন্ধুবান্ধব, আড্ডা, সিনেমা, ঘুরতে যাওয়া এসবে ওরা এখন খুব ব্যস্ত থাকে। বাসায় তো তেমন আর কাউকে পাওয়াই যায় না। কখন যে আসে আবার কখন যে দুর দাড় করে বেরিয়ে যায় সেটা বোঝাই দায়। খাওয়ার টেবিলের ছ’ চেয়ারের পাচটিতেই মনে হয় ধুলার আস্তর জমার উপক্রম। বাসায় একা একা হাঁপিয়ে ওঠে নিলু। ছেলেমেয়েদের ফোন করে বাসায় ফেরার কথা জিজ্ঞাসা করলেও ওরা বিরক্ত হয়। কোথায় যায় কি করে টেনশান তো হয়। মা হয়ে ওদের খোঁজ করা কি নিলুর আরেক অপরাধ? কিছু জানার অধিকার তো অতুনু অনেক দিন আগেই কেড়ে নিয়েছে। এখন সন্তানেরা ও বুঝি সে পথেই এগুচ্ছে। কি করা? নিজের ফেসবুক পেইজে আবার লগইন করে নিলু।
—————
গত দু সপ্তাহ আগে মেডিকেল কিছু টেস্ট করতে দেওয়া হয়েছিল নিলুর। রিপোর্ট নেওয়া নেওয়া করেও নেয়া হয় নি এখনও। অতুনু রিডিং রুমের চেয়ারে বসে বসে ভাবে আজ গিয়ে রিপোর্ট গুলো তুলে আনলে হয়। বছর খানেক আগে মেজর স্ট্রোক করে নিলু। শরীরের এক সাইড পক্ষাগাতগ্রস্থ হবার সাথে সাথে কথা বলার শক্তিটাও গিয়েছে। প্রথমে কিছু কিছু কথা বুঝা গেলেও গত তিন চার মাস ধরে কথা একেবারেই জড়িয়ে গিয়েছে। বর্ণমালার বই এর বর্ণ ধরে নিলুর কথা বুঝতে হয়। স্মৃতিতে সেদিনটি আজও তাজা হয়ে ওঠে।
অতুনু ওদের নতুন প্রজেক্ট টা নিয়ে কক্সবাজারে বিজনেস কনফারেন্সে ছিল । আচমকাই মায়ার মায়ের ফোন
– সাহেব, ম্যাডাম জানি কেমন করতেছে। ঘরে মেঘ বৃষ্টির কেউ নাই, কি করমু বুঝতেছি না।
– মায়ার মা, আমি ব্যস্ত আছি। ড্রাইভার কে কল করে পাশের ভাবীকে ডাক আমি পরে খবর নিচ্ছি।
ফোন কেটে দিয়েছিল অতুনু। ভেবেছিল, বুঝি বরাবরের মত প্রেসার বেড়েছে। পরে পাশের বাড়ির ভাবীর মোবাইল থেকে এল ছোট বার্তা
- নিলু স্ট্রোক করেছে। অবস্থা সিরিয়াস।
বিকেলের প্রথম ফ্লাইটেই ঢাকা ফেরত আসা। এরপর যমে মানুষে টানাটানি চললেও কোনমতে নিলু টিকে গেল। অতুনু খুব গরম হয়ে গিয়েছিল মেঘের ওপর
- এত বড় ব্যাপার, আর তুই আপডেট দিয়েছিস আমাকে এত পরে?
- বাবা, আমি তোমাকে কাঁপল অফ টাইম কল করেছিলাম বাট ফোন সুইচড অফ ছিল। এরপর মেসেন্জারে মেসেজ করেছি এন্ড এফ বি তে স্ট্যাটাস ও দিয়ে দিয়েছি। তুমি তাতে গো থ্রু না করলে, দেন হোয়াট ক্যান আই ডু?
স্তব্ধ হয়ে যায় অতুনু ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া মানেই কি এখন সব দায়িত্ব পালন করে ফেলা? আশ্চর্য! কিন্তু আবার ভাবে, মেঘ কে দোষ দিয়ে কি লাভ? সাইবার জ্বরে অতুনু নিজেই তার পরিবারকে জড়িয়েছে। সম্পর্কের মূল্যায়ন এখন মায়ার স্পর্শে নয় মোবাইল স্ক্রিনে ছোট্ট মেসেজে বেধে নেওয়ার কৌশল সে নিজেই সবাইকে শিখিয়েছে। অতুনু তো নিজেও এর বাইরে ছিল না। নিলুর সাথে সম্পর্ক তো ওর ফেসবুক ইমো মেসেন্জারের সাথেই বাঁধা ছিল। আবেগের অতীব প্রকাশ গুলো হত কেবল কিছু ইমোজি দিয়ে। নিলুর এ অবস্থার কারণ ডাক্তার বলেছিল মেন্টাল ডিপ্রশান থেকে। এরপর সংসারের সব সুতোগুলোয় কেমন টান পড়ে যায়। কিন্তু তাদের সবার সম্পর্কগুলো আদৌ কি কোন বাধনে বাঁধা ছিল?
ইদানিং অতুনুর হাতে দীর্ঘ অবকাশ। বয়স হয়েছে শরীর এত ঝক্কি আর নিতে পারে না। নিলু শয্যাশায়ী হবার পর থেকে বাড়িটা আরও কেমন যেন হয়ে পড়ল। ছেলেমেয়ে দুজনই বিয়ে থা করে বাইরে সেটেল্ড। ফর্মালিটির খাতিরে মাঝে মাঝে ফোন। নাতিপুতিগুলোকে ঐ ফেসবুকের কল্যাণেই যা দেখা। দেশে আসার সময় তেমন নেই। আসার কথা বলতেই সেদিন বৃষ্টি বলছিল
– আবার কি আসা বাবা! মায়ের এই অবস্থা, তোমাদের শুধু শুধু ঝামলায় ফেলা। এই তো দেখা হচ্ছে বেশ।
- তাও ঠিক। ঝামেলাই তো।
পোস্ট করা নাতির ছবির ওপর দুর্বল হাতে লাইক প্রেস করে অতুনু। ইদানিং নিলুর সামনে বসে একা বকতে বকতে ক্লান্ত লাগে অতুনুর। নিলার নিষ্প্রাণ মুখের দিকে হঠাৎ তাকালে মনে হয় নিলা বুঝি ওর কথায় খুব বিরক্ত হয় যেন অতুনু চুপ করলেই বেঁচে যায় ও।
সেদিন বিকেলে নিলুর পাশে বসে একা বকবকাচ্ছিল অতুনু। একাই তো কথা বলে সে। ব্যবসা গুটানোর সাথে সাথে বন্ধু মহলও গুটে এসেছে ওর। নিলুর পাশে বসে বকবকাত এখন ভালো লাগে বেশি। সেদিন নিলুকে হঠাৎ বলছিল
- কতদিন একসাথে ঘোরা হয় না বলত?
নিলুর বেঁকে যাওয়া মুখে যেন হালকা বিদ্রুপের হাসি দেখতে পেল অতুনু।
————
আজ কাজের মহিলাটি একটু আগে নিলুকে ঠিকঠাক করে দিয়েছে। মাথায় তেল দিয়ে মাথার দু পাশে বিনুনি গাঁথা, ম্যাক্সি গায়ে নিলুকে আজ অল্পবয়স্ক লাগছে বেশ। অতুনু নিলুর মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেসা করে
- আজ কেমন আছ?
ঠোঁট দুটি একটু নড়ে উঠল যেন। ইশারায় কি যেন লিখে জানাতে চাচ্ছে নিলু। অতুনু বর্ণমালার বইটা মেলে ধরে সামনে। অনেক ক্ষণের চেষ্টায় বর্ণের পর বর্ণ সাজিয়ে খাতাতে ফুটে উঠল একটা বাক্য
“ফেসবুকে কি আসলেই সময় ধরে রাখা যায়? পার করা যায় নিজেদের একান্ত সময়?”
নিজের হাতের লিখা লিখে ধাক্কা খায় অতুনু। অনুতপ্ত হাতে জড়িয়ে নেয় নিলুর হাত বলে
- নিলু, ক্ষমা কি করা যায় না?
নিলুর ক্লান্ত চোখের পানির ধারা চিবুক ছুঁতে চায়।
————
আজ রাতে নিলুর শরীরটা হঠাৎ খারাপ করেছে বেশি।অনেক রাত পর্যন্ত ছটফটিয়ে ভোরের দিকে একটু চোখ বুজেছে। অতুনু ও ঘুমায় নি সারারাত।এখন রাত জাগার কারণে ওর চোখ জোড়াও লেগে এসেছে। কতক্ষণ তন্দ্রাভাব ছিল কি জানি, কাজের লোকটা এসে জাগালো
- সাহেব, ম্যাডাম ….
আর কিছু বলতে হলো না। নিলুর ঘরে এসে ওকে দেখে মনে হল কি শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে। মুখে হাসির অবয়ব আঁকা। যেন কোন স্বপ্ন দেখছে।
নিলুর দিকে তাকিয়ে অতুনু ভাবে কি এমন চেয়েছিল নিলু সারাজীবন? একটু সময়! তখন অতুনুর কাছে নিলুকে দেবার মত এত সময় ছিল না। কিন্তু আজ! আজ তো অতুনুর অফুরন্ত সময় কিন্তু নিলু তো আজ ওকে সময় দিল না। কি করে পার করবে অতুনু এই সময়ের অতল সাগর? আচমকা নিলুর সেই দিনের কথা মনে পড়ে যায়। নিলু কি তবে তার চলে যাওয়ার কথা বুঝতে পেরেছিল তাই কি ও অতুনুকে ওমন বিদ্রুপ করে গেল? তাই তো, করবে নাই বা কেন? অতুনু তো নিজেই ওদের সম্পর্ক কে সাইবার দুনিয়ার আবরণে মুড়িয়ে দিয়েছিল তাহলে এখন কি সাইবারের পৃথিবীটা অতুনুর সত্যিকারের সহচর হবে? পারবে কি ফেসবুকের ঐ ইমোজির সব রিঅ্যাকশন অতুনুর মনের অনুভুতিগুলো প্রকাশ করতে? পারবে কি অতুনুর সীমাহীন এই একাকিত্ব ঘুচাতে?
(সমাপ্ত)

Related Posts

Leave a Comment