মাঝে মাঝেই নিজেকে বুঝি কোন এক প্রাগৈতিহাসিক গুহার উদরে আবিস্কার করি। সংকীর্ণ ধূলি জালিতে মোড়ানো, সরু পথ ভেদ করে যেখানে সূর্য দেবের আর্শীবাদ পৌঁছুতে বেগ পেতে হয় বড়। অমসৃণ স্মৃতির প্রস্তরখণ্ডের অস্তিত্ব পায়ের তলায় অনুভূত হয় কেমন। অবাঞ্ছিতদের মতই কতককে সরিয়ে নেই পথ থেকে তো আবার কতক যত্ন করে তুলে নেই হাতে। আবছা আঁধারে কোটরের দেওয়ালে হেঁটে বেড়ায় কতক ছায়া মানব, যারা কিনা এখন অন্য জগতের বাসিন্দা। চাপা গুঞ্জন, কিছু ফিসফাস শব্দ ইথার তরঙ্গে ভেসে বেড়াতে থাকে। আমি কান পেতে নেই, ওসব না বলা আখ্যান শুনে নেবার আকাংখায়। অজানা ভয় আর আনন্দের সংমিশ্রনে এক অদ্ভুত অনুভুতি জাগে মনে তখন। আচমকাই চাপা খিলখিল অশরীরী হাসির কলতানে শিরদাঁড়ায় বয়ে যায় শীতল স্রোত। বাদুরের প্রশস্ত পাখার ঝটপটানিতে সেই মোহ কাটে সহজেই। আবার সব চুপ! যেন কোন অনুরণ জেগেই ওঠে নি এখানে কোন কালে। কিছু ভেবে নেই খানিকক্ষণ। গিরগিটির ন্যায় চিত্তের কল্পনার রঙটাও বদলাতে থাকে সময়ের আবর্তে। তারপর আনমনে পা বাড়িয়ে নেই সম্মুখে। স্মৃতির কলতানে মুখর স্রোতস্বীনি তুফান বেগে ছুটে চলছে কোন অজানার পানে। জানি না, কোন অজানা উৎস থেকে ওর জন্ম? উন্মুত্ত জলরাশির মাঝে বেজে ওঠা গমগম ছন্দে বুঝি অতি প্রিয় সেই কন্ঠস্বর গুলো কানে এসে বাজে আমার। যেসব সুর অনেক আগেই থেমে গেছে চিরতরে। হয়ত আবার ফিরে এসেছে এই বহতা জলরাশির ছদ্মবেশে! যে কথা এককালে ছিল না বলা, ছিল অসম্পূর্ণ তাকে পূর্ণতা দিতেই বুঝি আজ এত আয়োজন। অটল শৈলতে আঁছড়ে পড়ে শীতল জলকণা বিন্দু ছলকে পড়ে শরীরে। শিহরিত হই আবারও। বহুদিন পর বুঝি সেই চিরচেনা স্পর্শে কেউ আবার ছুঁয়ে দিল আমায়! বিহ্ববল হয়ে খুঁজে যাই সেই অদৃশ্য সেই সব অস্তিত্বকে। নাহ! তাদের দেখা পাওয়া হয়ে ওঠে না আমার। ভূবন ডাঙার এই নশ্বর মায়া কাটিয়ে ক্রমেই তারা নিজেদের বসিয়ে নিয়েছে কোন এক মায়া জগতে। এক অজানা ধরা ছোঁয়ার বাইরের জগতে। অকারণেই মুখ তুলে নেই ওপরে। নীল বসনায় আবৃত গগন কায়ায় জেগে উঠেছে বিন্দু বিন্দু হীরক রাজির মেলা। শুনেছি, সেখানে গেলে নাকি ওরা তারা হয়ে গেঁথে যায়! সত্যি কি তাই? আপন মনে খুঁজতে থাকি ওদের আবারও! ধীরে যেন সেই সব ছবি একে একে ফুটে ওঠে সেসব বিন্দু রাজির মাঝে, আবার মিলিয়েও যায় দ্রুত। চারপাশে কেমন নীরবতা! আচানক অনীলের ঢেউ ছাপিয়ে আবারও শুনতে পাই সেই অপার্থিব গানের সুর। অবিন্যস্ত কুন্তলের মাঝে খেলে বেড়ায় পবন কুমারীর স্বপ্নীল আঙুল স্পর্শ। কানের নরম লতি ছুঁয়ে ওরা কেমন দৌড়ে পালিয়ে যায়। রোজ ওদের এই ছোঁয়াছুই খেলা উপভোগ করি বেশ! এরপর? এরপর আর কি! আনমনে বসে পড়ি সেই বয়ে চলা জলদের ধারে। অনুভূতিতে মোড়ানো কতক নুড়ি তুলে নিয়ে ছুঁড়ে দেই সম্মুখের ঐ বয়ে চলা চপলা স্রোত ধারার পরে। তাতে বুঝি কিছু অচেনা অনুভূতির কম্পন উঠে ওতে! আর কিছু ফ্যাকাশে গল্পের বুদবুদ! ব্যাস! আবার সব আগের মতই! কোন ভাবনা আর ভাবায় না আমায়। মোহবিষ্ট হয়ে বসে রই। চোখের পাতায় ভর করে আসীন হতে চায় পবন কুমার! শ্রান্ত নয়ন যুগল আমার মুদে যেতে চায় অকপটে। বাঁধা দেই না আর ওতে। নিজেকে সঁপেই দেই কোন সে অলীক প্রান্তর পৌঁছে যাবার খেলার মাঝে। হ্যাঁ। রোজ এভাবেই এই নিদ্রা যাবার যাত্রা পথে পাড়ি দেবার প্রস্তুতি নেই। সামনের পথটুকু যে জলদি পেড়ুতে হবে আমাকে। জানি, আজ এ খেলায় যদিও আমি বিফল, তবে একদিন সফল হব ঠিক ঠিক…